প্রিয় নানু,
ক্যামন আছো তুমি? আজ ৯০ বছরের এক মিষ্টি বুড়ি রুগিনির সাথে কথা বলতে বলতে তোমার কথা মনে পরছিল। জানো তো, ইংল্যান্ডে করোনার প্রকোপে সবাই আটকে আছে ঘরে। মিষ্টি বুড়িটা কতদিন ঘরে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে কে জানে, খুব মিস করছিলো সে তার কন্যাদের, তার নাতিপুতিদের। আমি জানি তুমিও এমন করে আমাদের খুব মনে কর। ৯০ পারি দিয়ে তুমিও তো ক্যামন অনেকের ভিড়ে একাই থাকো।
ভোর সকালে এখনো তোমার পান দুকুনির শব্দে পুরো বাড়ীর ঘুম ভাঙ্গে। কিন্তু আগে যে তুমি সাত সকালে পান্তা ভাতে শুটকি ভর্তা করে তাই দিয়ে সকালের নাস্তা দিতে তা কি আর এখন তুমি পারো? শীত- গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই তোমার পিঠা-পুলির উৎসব লেগে থাকতোই, এত এত পিঠা করে তুমি তরুণ বয়সেই সব খাইয়ে দিয়েছ, সেই স্বাদ-গন্ধ- অনুভূতির স্মৃতিগুলো আজো মনে গেঁথে আছে। তখন বুঝিনি, আজ বুঝি, ঈশ শুধু স্বাদের ঢেঁকুর না তুলে তোমার হাতের কিছুটা গুন রপ্ত করার চেষ্টা যদি করতাম, তাহলে আজ এই বিদেশ বিভূঁইয়ে কাজের ফাঁকে উল্টো পাল্টা হাতে ময়দা, গুঁড়, খেজুরের রস, তালের শাঁস দিয়ে কিছু না কিছু পিঠের সুবাস আমিও ছড়াতাম তোমার কথা মনে করে।
কৈশোরে কত ভূত-পরী আর রাজা-রানির গল্প শুনিয়েছ তুমি কিন্তু তোমার এই দীর্ঘ জীবনযুদ্ধের কত চড়াই-উতরাই আর লড়াইয়ের গল্পটাই কখনো জানা হোল না। এবার যখন দেখা হবে তোমার জীবনের গল্পই শুধু শুনতে চাই আর লিখতে চাই।ভালো থেক, ভালবাসা নিও।
ইতি
তোমার নাতনি ডালিয়া
ডা. সালমা হাসান
যুক্তরাজ্য