এক বন্ধু সেদিন তার নয়মাসের এক বাচ্চাকে নিয়ে এলো,অদ্ভুদ সুন্দর হাসিখুশি বাচ্চাটির ডাউন সিনড্রোম। মায়ের চোখে পানি আর শিশুটির প্রতি তার তীব্র অবজ্ঞা! এরকম শিশু জন্মের জন্য বার বার নিজেকেই দায়ী করছে।
আমরা প্রত্যেকেই আলাদা,স্বতন্ত্র,কারো সাথে কারো মিল নেই।ডাউন শিশুর রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ঠ্য,তাকে মেনে নিয়ে সমাজের মূলধারার সাথে যুক্ত করে এগিয়ে যেতে হবে।মনে রাখা দরকার, আমরা আমাদের জন্মের জন্য দায়ী নই।এই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরী।
আজকের বিষয়: ডাউন সিনড্রোম ♦
ডাউন সিন্ড্রোম জীনগত ত্রুটির কারনে হয়ে থাকে।
কোষ বিভাজনের মধ্যে দিয়ে একটি ভ্রুনের বিকাশ ঘটে থাকে। বাবা এবং মায়ের কাছ থেকে একটি করে মোট দুটি বা এক জোড়া ক্রোমোজোম করে মোট ২৩জোড়া ক্রোমোজোমের সম্বনয় মানবদেহ সৃষ্টি হয়।
যদি কোনো কারনে জীনগত ভুলে একটি ক্রোমোজোম বেশি আসে অর্থাৎ দুইটির জায়গায় তিনটি ক্রোমোজোম হয়,তাহলে যে শিশুটির জন্ম হয়,তাকে ডাউন সিন্ড্রোম শিশু বলা হয়।
এর সঠিক কোনো কারন জানা যায় না।
তবে কিছু ঝুঁকিপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।যেমন, মায়ের বয়স যদি ৩৫বছরের বেশি হয়,প্রথম বাচ্চা যদি ডাউন সিন্ড্রোম হয়,তবে তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের শিশু জন্মানোর ঝুঁকি থেকে যায়।গবেষনা বলছে, ৩৫বছরের বেশি হলে ৩৫০জনে ১জন,৪০এর বেশি হলে প্রতি১০০জনে ১জন এবং ৪৯বছরের বেশি হলে প্রতি ১০জনে ১ জন ডাউন সিন্ড্রোম হবার ঝুঁকি থাকে।
তবে আশার কথা হলো,জন্মের পূর্বে রক্ত পরীক্ষা এবং আল্টাসনোগ্রাফি করে ডাউন সিন্ড্রোম সনাক্তকরণ সম্ভব।
নতুন গবেষনা বলছে, গর্ভধারনের পূর্বে এবং গর্ভকালিন সময়ে ফলিক এসিড সেবন হতে পারে প্রতিকারের উপায়।
ডাউন সিন্ড্রোম শিশু দেখতে কেমন?
এই শিশুরা সাধারনত চ্যাপ্টা মুখমন্ডল, ছোট মাথা,খাটো ঘাড়,জিহ্বা বের হয়ে থাকা, খুব নরম ফেলেক্সিবেল মাংশপেশি,চোখের পাতা ঝুলে থাকা,কম বুদ্ধি সম্পন্ন হয়ে থাকে।
প্রায় অর্ধেক শিশু হৃদরোগ এবং পাকস্থালীর সমস্যা নিয়ে জন্মায়।
কি করবেন?
এধরনের শিশুদের জন্য সব ধরনের চিকিৎসা সহায়তা প্রয়োজন হয়। ডক্টর, ফিজিও, স্পিচ থেরাপিষ্ট, সাইকোলজিস্ট, কমিউনিটি কাউন্সিলার সহ একটি সামগ্রিক চিকিৎসা দরকার।
বাবা মা হিসাবে প্রথমেই বিষয়টিকে মেনে নিতে হবে।
শিশুর সাথে পজিটিভ ব্যবহার করতে হবে। মাংশপেশী নরম বলে নিয়মিত থেরাপিউটিক ব্যায়ামের মাধ্যমে মাংশপেশিকে শক্তিশালী করতে হবে।
এসব শিশুরা ভাষা শিখতে পারে না,বা শব্দ ভান্ডার অনেক কম থাকে।
তাই সহজে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করা কঠিন হয়।
তাই খুব সহজ,ছোট, নির্দেশ দিতে হবে, ভাষা শেখানোর জন্য ছবি যুক্ত বই ব্যবহার করতে হবে।
নিয়মিত চিকিৎসকের তত্বাবধানে থাকতে হবে।
এইসব বাচ্চাদের মোটা হবার প্রবনতা অনেক বেশি থাকে,তাই খাবারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। চর্বি এবং বেশি ক্যালোরি জাতীয় খাবার কম দেবার পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করাতে হবে।
বাংলাদেশে প্রায় ৮০০জনে ১ জন ডাউন সিন্ড্রোম। বর্তমানে প্রায় ২লক্ষ ডাউন সিন্ড্রোম ব্যক্তি রয়েছে।
এরা স্বাভাবিক মানুষের মতোই সমাজ উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে, তাদেরও রয়েছে সামাজিক, পারিবারিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার।
তাই একজন সচেতন নাগরিক হিসাবে আমাদের তাদের পাশে দাঁড়ানো কর্তব্য।