Reflection of Women’s Sufferings in Life

এতো কাঁদতে কাঁদতে কখনো কোন লেখা এর আগে আমি কোনোদিন লিখিনি……..

নারীদেরকে আটকে ফেলতে আমাদের সমাজে বহু অদ্ভুত অদ্ভুত কাজ করা হয়। স্পেশালী যদি মেয়েটা বিবাহিত হয় তাহলে তো কথাই নেই। সব সমস্যার সমাধান তখন “বাচ্চা নাও” ফুসমন্তরে এসে ঠেকে। কিন্তু বাচ্চা নেবার পরেও যখন সব ঠিকঠাক চলে না তখন শুধুমাত্র বেঁচে থাকার প্রয়োজনে এবং দুনিয়াতে আসা  সন্তানকে একটা সুস্থ সুন্দর পরিবেশে মানুষ করার জন্য   একজন মেয়ে যখন সিদ্ধান্ত নেয় অসহনীয় নরক যন্ত্রণা সম সংসার নামক দোজখ থেকে বের হয়ে আসার তখন এই সমাজ,  পরিবার,  বন্ধু, আত্মীয়  সবাই মেয়েটাকে এক ঘরে করে দেয় মুহুর্তে। এক লহমায় ভালো মেয়ে থেকে খারাপ মেয়ে ট্যাগ লাগা  ডিভোর্সী, সিঙ্গেল মা হয়ে যায় সবার চোখে এক কালের  ভালো, ভদ্র, ব্রিলিয়ান্ট মেয়েটি।

সন্তান নিয়ে একটু কম বয়সী ডাক্তার  মেয়ের এই সমাজে একা জীবন যাপন করাটা ভয়াবহ  যুদ্ধের মতো। আল্লাহর অশেষ রহমত অল্প বয়সী থেকে বয়স্কা হয়ে গেছে মেয়েটি। দশ দশটা বছর সন্তান নিয়ে একাই কাটিয়ে দিয়েছে জীবনটা মাথা উঁচু করে নিজের পরিচয়েই। নিজেই সন্তানকে নিয়ে ঘর সংসার সাজিয়েছে মা ছেলের। নিজের বাবার বাড়িতে সন্তানসহ থেকে সন্তানের আত্মসম্মান প্রশ্নবিদ্ধ করার রিস্ক নেয়নি মেয়েটি। স্কুলিং, ছেলের সারকামসেশনের ওটিতে সার্জনের সাথে এসিস্ট করা থেকে শুরু করে সব অসুখে রাতের পর রাত জেগে ছেলেকে তিন থেকে চৌদ্দ বছর পর্যন্ত এনেছে একা এই মা। সবকিছু সুন্দর মতো করার পরেও আটকে গিয়েছিল পাসপোর্ট করাতে যেয়ে। সেই কান্নামাখা গল্পটার সুন্দর পরিণতি হলো আজকে। এত আনন্দমাখা কান্না বহুদিন আমি কাঁদি নাই। জার্নিটা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে। যদি কারো এতটুকুও কাজে আসে আমার জার্নিটা পড়ে।

আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ!

Finally I got it.

সুদীর্ঘ সাত বছরের অকল্পনীয় দুঃসহ  মানসিক যুদ্ধের শেষে আমি পারলাম অবশেষে। সব ধরনের কুদসিৎতম বাঁধা, আইনী মার প্যাঁচ, হুমকি ধামকি, সব ধরনের  বাংলাদেশী পদ্ধতির সিস্টেমকে পাড়ি দিয়েই আমার সন্তানের পাসপোর্ট আমি করাতে পারলাম।

যারা ভাবছেন পাসপোর্ট করা এমন কি কঠিন কাজ ?

তারা দয়া করে জেনে নেবেন এদেশের একজন সিঙ্গেল মায়ের থেকে এই বিষয়ে। জুতোর তলা আক্ষরিক অর্থেই ছিঁড়ে যায় সন্তানের  পাসপোর্ট করাতে যেয়ে। মাথা কতবার যে নীচু করতে হয় সিস্টেম নামক শেকলের সামনে। এ দেশের কিছু পুরুষ মানুষ এবং তার পরিবার কত যে খারাপ হতে পারে ভাবতেও পারবেন না অনেকেই।

 তিন তিনবার পেপার্স, টাকা জমা ঠিকঠাক করার পরেও সম্ভব হয়নি পাসপোর্ট করানো। আতঙ্কে পাসপোর্টের কথাই আর শুনতাম না আমি। অথচ আহুর IGCS (O  level) এক্সামের জন্য পাসপোর্ট লাগবেই লাগবে। এই বছরটাই শুধু হাতে ছিল আমার। নাহলে আমার ছেলের লেখাপড়ার পরিণতি কি হবে আমি জানতাম না। অথচ আমার ছেলেটা best deserve করে। মা হিসেবে তাকে তা দেয়া আমার দায়িত্ব। সিঙ্গেল মায়ের অজুহাত দিয়ে তো আমি আমার সন্তানের সুন্দর জীবন ধারনের জন্য কম কিছু তো করতে পারি না। এই ছোট্ট মানুষটা তো কোন কিছুর জন্য দায়ী না দুজন এডাল্ট মানুষ যারা তাকে পৃথিবীতে এনেছিল তাদের কোন সিদ্ধান্তের জন্য।

এরই মধ্যে কোভিড চলে আসাতে সবকিছু আরো কঠিন হয়ে গেল। একবার সিদ্ধান্ত নিলাম আহুর বয়স পনেরো হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করব। পনেরো হয়ে গেলে  মা বাবা কারো পেপার্স না হলেও চেলে। যেহেতু আমার কাছে আহুর বায়োলজিক্যাল ফাদারের কোন পেপার্স, ছবি নেই। যে মানুষটা আমার আর কেউ না, তার কাগজপত্র সাথে নিয়ে রাখার লজিক বারো বছর আগে আসলেই আমার মাথায় আসেনি। জীবন যে এতো জটিল এটা তো তখন আমি আসলে জানতাম না।  ভদ্রলোক কোনোভাবেই এই বিষয়ে কোঅপারেট করছিলেন না। আহুর স্কুলে ভর্তির সময়েও তার ছবি, NID আমি জমা দিতে পারি নাই স্কুলে। তাতে আমার ছেলের স্কুলিং আটকে থাকেনি। বিশ্রী বিশ্রী প্রশ্ন ইন্টারভিউ বোর্ডে একা আমি চোখের পানি আটকাতে আটকাতে ফেস করেই ছেলেকে আমার সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ এডুকেশন দেবার চেষ্টা করে গেছি।

মা হই তো, সন্তানের জন্য শরীরের রক্ত, মাংস সব দিয়ে দিতে পারি। নিজের ইগো, জিদ, স্বার্থ, মান, অপমান, সম্পত্তি কখনোই সন্তানের আগে আসে না আমার কাছে।

পাসপোর্টটাও আহুর লেখাপড়ার জন্যই দরকার। দশ বছর ধরে এক হাতে লালন পালন করা এই আমাকে এই কথাও শুনতে হয়েছে “আমি ছেলেকে বিদেশে পাচার করে দেবার জন্য পাসপোর্ট করাচ্ছি।”

প্রতিটা অপমানের দিন আজকে চোখের সামনে ভেসে উঠছে…….

পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় যেসব জঘন্যতম প্রশ্ন ফেস করেছি তা আর না বলি। শুধু তো প্রশ্ন না আরো বহু কিছু ফেস করেছি পেপার্স সাবমিটের সময়, ছবি তোলার সময়ে।

ডাক্তার পরিচয়টাও কখনো কখনো সুখকর এই দেশে !

আর বাপের মতো বাপ থাকলে দুনিয়ার সাধ্য কই পেইন দেবার ? আমার আব্বু যা করেছে আমার ছেলের পাসপোর্ট হাতে পাবার জন্য তা বলে বোঝানো সম্ভব হবে না। আমিও কোথাও এক ইঞ্চি পরিমাণ গ্যাপ রাখি নাই পাসপোর্ট হাতে পাবার জন্য। সাদা কালো সব রাস্তা দেখে নিয়েছি। পুরোই ডেসপারেট ছিলাম আমি। আমার ছেলের ভাষায় অবশ্য কথাটা হচ্ছে — “আমার মা সব পারে আমার জন্য।”

Yessss বাপেরও বাপ থাকে।

 আমাদের কারোই উচিত না এই বিশ্রী সত্য কথাটা ভুলে যাওয়া। সৃষ্টিকর্তা সব সময়ই সত্য এবং সুন্দরের সাথে থাকেন। হয়তো সময় লাগে। বিভিন্ন ধরনের জীবন পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু ধৈর্য ধরে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলে ঠিকই অর্জন করা সম্ভব হয়। 

আমার ছেলের যদি ইচ্ছে হয় এবং ওর কপালে যদি বিদেশে জীবনযাপন লেখা থাকে তাহলে কার সাধ্যি তা আটকানোর ? অন্ততঃ  আমি আর আমার আব্বু বেঁচে থাকতে। ওপেন চ্যালেঞ্জ দিয়ে দিলাম আজকে। পারলে আটকান। আমিও দেখি।

About the Author:

Developer Herwill

Developer Herwill