Charu- Personal Experience- Hope and Hopelessness

অনেকদিন অদৃশ্য ছিলাম। সবকিছু থেকে। কী বলব! জুন মাস থেকে চাকরী নেই। করোনা ভালো একটা ধাক্কা দিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে সারা পৃথিবীর অর্থনীতিতে। আমি যে কোম্পানীতে কাজ করতাম, তারা তাদের মিউনিখ ব্রাঞ্চ কাটছাঁট করে ফেলছে, পয়সা নাই। এর মাঝে মিউনিখ ছেড়ে ডুসেলডর্ফ চলে এলাম। আমার ওলন্দাজ সাহেব থাকেন আমস্টারডাম। ওনার কাছাকাছি থাকা হবে। প্লাস বিনাবেতনে মিউনিখ থাকা সম্ভব নাহ! অনেক অনেক খরচ এই শহরে।

দুমাসের জন্য একটা রুম নিলাম ডুসেলডর্ফে, জুলাই আর আগস্ট। পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলাম, আগস্ট সেপ্টেম্বরে কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে। দুমাস হয়ে গেল, অনেক ইন্টারভিউয়ের পর ফাইনাল স্টেজে গিয়ে কোম্পানীগুলো পিছিয়ে যাচ্ছে, প্রজেক্ট ক্যানসেল হয়ে যাচ্ছে, তাই। কী একটা ভয়াবহ অবস্থা। না, সোশ্যাল মানি পাই না। নিজের সেভিংস যা ছিল, তা দিয়ে চলছি… সেটাই বা আর কতদিন থাকবে! ভেবেছিলাম, সেপ্টেম্বরে চাকরী না হলেও, বাসা না পেলেও, অন্তত আমার সাহেবের বাড়ি চলে যাব।

সুলতানা বিবিয়ানা আর সাহেববাবুর বৈঠকখানা! তার সাথেও ব্রেকআপ হয়ে গেল এখন প্রায় একমাস। বেশ ডিপ্রেসড ছিলাম, উনি সারাদিন চাকরী করেন আর আমি তার বাসায় বসে একটা বোতল কোলে করে হা করে সারাদিন দেয়ালের দিকে তাকিয়ে থাকি। মেজাজ খিচড়ে থাকত। সন্ধ্যায় শুরু হত খিটিমিটি। তাঁকে emotionally unavailable মনে হত, দূরত্ব বেড়ে যাচ্ছিল। আরও কিছু পারসোনাল ব্যাপার ছিল, শরীর খারাপ ছিল খুব। কখনও এমন পরিস্থিতিতে পড়ি নি। জীবনে কোন উদ্দেশ্য নেই, কোন লক্ষ্য নেই, কোন কিছু করার নেই। আমি প্রচন্ড ওয়ার্কাহোলিক। আমি explode না করে implode করলাম। সব ছেড়েছুড়ে আবার মিউনিখ চলে এলাম। থাকছি বোন আর বন্ধুদের বাসায়। মাঝে মাঝে মনে হয়, কেন ব্রেকআপ করলাম! তাহলে এখন সাহেবের সাথেই থাকতে পারতাম। আবারও মনে হচ্ছে, মজবুরি বলেই এমনটা চিন্তা করছি। ওখানে থাকলে মরেই যেতাম।

মনে পড়ে, মিউনিখ ছাড়ার আগের রাতে সোমা আপুর সাথে অনেকক্ষণ কথা বলেছিলাম। আমি সারাজীবন অনেক স্বাধীনভাবে চলেছি। আমার মেয়ের বাবার সাথে ডিভোর্স হবার পরপর কোথাও যাবার জায়গা ছিল না। সেদিন থেকে নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কখনও কারও মুখাপেক্ষী হব না, আমার নিজের একটা ঠিকানা থাকবে সবসময়। সাত বছর পর ভাবলাম, দেখি একটা চান্স নিয়ে। A leap of faith.

নাহ, আমার কোন অনুশোচনা নেই। কারণ সিদ্ধান্তটা ছিল আমার নিজেরই এবং অনেক চিন্তা করে নিয়েছিলাম এই সিদ্ধান্ত। আমার মনের মত ফলাফল হয় নি। তো কী হয়েছে। শিখছি। আরও শিখব। আমার অভিজ্ঞতায়, this too shall pass. কথার কথা নয়, আসলেও। প্রতিবারের মতই আবারও I shall rise like a phoenix again from the ashes! আমার যতটুকু করা সম্ভব করেছি। এখন শুধু একটু সময়ের ব্যাপার।

এই অপেক্ষাটাই সবচেয়ে কষ্টের। আমি তাই কখনও যা আমার হাতে নেই, তা নিয়ে চিন্তা করি না। যেটা আমি কন্ট্রোল করতে পারব, সেটা নিয়েই ব্যস্ত থাকি। শুধু আকাশ কুসুম চিন্তা করে মাথা খারাপ করার মানে হয় না। একটাই মাথা আমার, এটাই আমার সম্বল, এটাকে যত্নে রাখতে হয়।

আমার মন খুব খারাপ থাকলে আমি ভবঘুরের মত একটা ব্যাকপ্যাক নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ি। এবারও তাই করছি। আজ রাতে রওনা দিচ্ছি নাইটকোচে করে ক্রাকভ। সেখানে সবার আগে দেখতে যাব আউশউইৎস… নাৎসি জার্মানির সবচেয়ে বড় কনসান্ট্রেশন ক্যাম্প। মানুষের দুঃখ কষ্ট দেখলে, নিজের কষ্টগুলিকে সামান্য লাগে।

নোভা আপু একবার আমাকে বলেছিলেন, আমরা সবাই শুধু struggle আর success story দেখি – কিন্তু struggle থেকে success এর transition-টা আড়ালেই থেকে যায়। এটা যদি জানতাম সবাই, অনেকেই উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা পেত। এটা আমার Transition Story. আশা করছি, যাঁরা এই মুহূর্তে স্ট্রাগল করছেন, একটু হলেও শক্তি পাবেন।

আশা থাকলেই প্রত্যাশা থাকে, আর প্রত্যাশার হাত ধরেই আসবে হতাশা। তাই বলে হতাশাকে ভয় পেয়ে আশা করা বন্ধ করে দিলে কি চলবে?

About the Author:

Developer Herwill

Developer Herwill